প্রতিষ্ঠার পটভূমি

১৮৩৬ সালে চট্টগ্রাম জেলা স্কুল হিসেবে এই প্রতিষ্ঠানের জন্ম। প্রতিষ্ঠালগ্নের তেত্রিশ বছর পরে ১৮৬৯ সালে একে উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে উন্নীত করা হয়। তখন থেকেই এটি চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ বা চট্টগ্রাম কলেজ নামে পরিচিত হয়। বর্তমান চট্টগ্রাম এর চকবাজারের কলেজ রোডের পাশের প্যারেড গ্রাউন্ডের এক কোনের একটি পর্তুগিজ আমলের স্থাপনায় এই কলেজের কার্যক্রম শুরু হয়। কলেজে উন্নীত হবার পরে জনাব জে সি বোস এর প্রথম অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। ১৯০৯ সাল থেকে এই কলেজে কলা বিভাগের পাশাপাশি উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞান বিভাগ চালু করা হয়। ১৯১০ সালে এই কলেজটি তৎকালীন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণীর ডিগ্রী কলেজের স্বীকৃতি লাভ করে। সেই অনুযায়ী এই কলেজ থেকে গনিত, রসায়ন বিজ্ঞান ও পদার্থ বিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতক (সম্মান) পর্যায়ের বিষয় সমূহ সম্পর্কে পাঠদান আরম্ভ হয়। ১৯১৯ সাল থেকে স্নাতক শ্রেণীর বিষয় সমূহে ইংরেজি এবং সম্পূরক শ্রেণীতে দর্শন এবং অর্থনীতি যোগ করা হয়। ১৯২৪ সালে এই কলেজে প্রথম মুসলিম প্রিন্সিপাল হলেন শামসুল ওলামা কামালুদ্দিন আহমদ। তার আমলে কলেজ দ্রুত উন্নতি লাভ করে। শেরে বাংলা এ, কে, ফজলুল হক এই সময় মুসলিম হোস্টেল এর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। শামসুল ওলামার সময়ে ই কলেজ ম্যাগাজিন প্রকাশ করার রেওয়াজ শুরু হয়। তার সময়ের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হচ্ছে সহশিক্ষার প্রবর্তন। ১৯২৬ সালে এই কলেজের প্রথম ছাত্রাবাস প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৯৫৫ সালে স্নাতক শ্রেণীর যাবতীয় বিষয় সমূহ প্রত্যাহার করা হলেও ১৯৬০ সাল থেকে পুনরায় ইংরেজি, বাংলা, অর্থনীতি ছিত্তাগন, পদার্থ, রসায়ন এবং গনিতে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণীর বিষয়সমূহ চালু করা হয়। ১৯৬২ সাল থেকে প্রাণীবিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা এবং পরিসংখ্যান এ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণী চালু করা হয়। ১৯৫৫ থেকে ১৯৬৫ এর মাঝে ব্যাপক হারে অবকাঠামোগত পরিবর্তন ও পরিবর্ধন সাধন করা হয়। তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার অধীনে এর বিজ্ঞান গবেষনাগার এর উন্নয়ন সাধন, নতুন প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ, নতুন ছাত্রাবাস নির্মাণ এবং পদার্থ, রসায়ন ও জীববিজ্ঞান অনুষদের জন্য আলাদা ভবন নির্মাণ করা হয়। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর চট্টগ্রাম কলেজ এর আওতাভুক্ত হয়। বর্তমানে এটি চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীনে উচ্চ মাধ্যমিক সনদের পাশাপাশি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বাংলা, ইংরেজি, অর্থনীতি, পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন বিজ্ঞান, উদ্ভিদবিদ্যা, প্রাণীবিদ্যা, গনিত, পরিসংখ্যান, ভূগোল, ইতিহাস, রাজনীতি বিজ্ঞান, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, দর্শন, সমাজবিজ্ঞান ও মনোবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পাঠদান ও সনদ প্রদান করে থাকে।

অবকাঠামো

কলেজের অভ্যন্তরেই বিশাল আকৃতির ঐতিহাসিক প্যারেড গ্রাউন্ড অবস্থিত।

বিভাগ সমুহ

এখানে মানবিক ও বিজ্ঞান বিষয়ে ২০টি বিভাগ রয়েছে অধ্যায়ন করার জন্য।

কলেজ ভবন

১৫টি প্রাতিষ্ঠানিক এবং ১২টি আবাসিক ভবন নিয়ে চট্টগ্রাম কলেজের অবস্থান। প্রাতিষ্ঠানিক ভবনগুলো নিম্মরূপ

  1. প্রশাসনিক ভবন
  2. রেড বিল্ডিং
  3. একাডেমিক ভবন ১
  4. ভূগোল ভবন
  5. উদ্ভিদবিজ্ঞান ভবন
  6. রসায়ন ও প্রাণীবিজ্ঞান ভবন
  7. পদার্থবিজ্ঞান ও গণিত ভবন
  8. অডিটরিয়াম ভবন
  9. ছাত্রী মিলনায়তন ভবন
  10. টিএসসি ভবন
  11. কেন্দ্রীয় মসজিদ ভবন
  12. মেডিক্যাল সেন্টার
  13. কলেজ ক্রীড়া ভবন
  14. লাইব্রেরী ভবন
  15. একাডেমিক ভবন ২
  16. একাডেমিক ভবন ৩ ছাত্রাবাস

আবাসিক ভবনগুলোর মাঝে তিনটি ছাত্রাবাস এবং একটি ছাত্রী নিবাস অবস্থিত। এগুলো নিম্মরূপ:

  1. শহীদ সোহরাওয়ার্দী ছাত্রাবাস (এর দুটি ব্লক অবস্থিত। এ ব্লকটি মুসলিম এবং বি ব্লকটি অমুসলিম ছাত্রদের জন্য বরাদ্দকৃত)
  2. শের এ বাংলা ছাত্রাবাস
  3. ড: আব্দুস সবুর ছাত্রাবাস
  4. হযরত খাদিজাতুল কোবরা (র:) ছাত্রী নিবাস

পাঠাগার

ঠিক যেমন চট্টগ্রাম কলেজ চট্টগ্রাম এর অন্যতম ঐতিহ্যবাহী এবং স্বনামধন্য কলেজ, তেমনি এর গ্রন্থাগারটিও ঐতিহ্য বহন করে।এই গ্রন্থাগারে সংগৃহীত বানিয়ান এর পিলগ্রম প্রগ্রেস এর এক কপি বই থেকেই পাঠাগারটি প্রতিষ্ঠার সময়েই জানা যায়।বর্তমানে এর সুপ্রশস্ত পাঠগৃহ এবং রেফারেন্স বিভাগ রয়েছে যা টিচার এবং ছাত্রদের নিরিবিলিতে পড়াশোনা করার জন্য খুবই উপযোগী।পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরবর্তী বছরে এর বই এর সংখ্যা ছিল প্রায় বিশ হাজার। ১৯৬৪ সালের ৩০শে জানুয়ারীর এক হিসেব অনুযায়ী এর বই সংখ্যা ছিল ৩০,৫৪৭। কিন্তু এখন এর বই এর সংখ্যা অর্ধ লাখের ও বেশি।

অন্যান্য অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধাসমূহ

  • দ্বিতল মসজিদ
  • ছাত্র ও ছাত্রীদের জন্য আলাদা মিলনায়তন
  • জিমনেশিয়াম
  • ক্যান্টিন (ছাত্র ও ছাত্রীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা সম্বলিত)
  • ডাকঘর
  • ব্যাংক